Thursday, April 23, 2015

নদীর কাছে গেলাম



---শামসুল ফয়েজ

নদীর কাছে গেলাম
কেন নদীর কাছে গেলাম?
নদীর গতর খুবলে তোলা
বালুর পাহাড় পেলাম।

নদীর কাছে গেলাম,
শুধুই নদীর কাছে গেলাম।
মোবিল পোড়া ধোঁয়ার ভিতর
ফুসফুসে দম নিলাম।
ঘাটের ফেরী পারাপারে
বৃথাই দোয়েল দিলাম।
নদীর কাছে গেলাম,
আহা! নদীর কাছে গেলাম।
কোদাল ঘায়ে ত্যক্ত নদীর
জখম দেখে এলাম।
শহর পাশের চরটি জুড়ে
ট্রাকের বহর ছাওয়া;
নায়ের উপর নাই তোলা পাল,
বয় না রঙিন হাওয়া।
ভটভটানি কালের নায়ে
দাঁড় হয় না বাওয়া।

তবু নায়ের উপর থেকে
হঠাৎ করে নুয়ে;
পরিস্রুত স্বচ্ছ জলে
মুখটি নিলাম ধুয়ে;
হাত ডুবিয়ে বৃহ্মপুত্রের
ঝিনুক দিলাম ছুঁয়ে।

বৃষ্টিস্নানে বসুন্ধরা



---শামসুল ফয়েজ

সড়ক-দ্বীপের ঘাসের দঙ্গল,
       পথের পাশের তরুবীথি,
               ছাদবাগানের টগরবেলীর পুষ্পকলি;
লোহার রেলিং জাপটে ধরা কুঞ্জলতা
হঠাৎ সুখের বৃষ্টিস্নানে আত্মহারা।

লাউয়ের জাংলায় উন্মথিত
         তানপুরাটায় খুশীর দোলে বিপুল সাড়া।
ঝর্ণাজলে আনন্দিত ঝুলবারান্দা, দালানকোঠা,
ধূলার বহর, ধুঁকতে থাকা গরম শহর,
             পিপাসার্ত বসুন্ধরা।

জলের ফোঁটায় হয় কুপোকাত
        কণ্ঠনালি রুদ্ধ করা রুদ্র খরা।
মুখ খুলে খায়, হৃদয় জুড়ায়
পুকুর-ডোবায় শূন্য ঘড়া।

পাতার শিরায় খুব শিহরণ,
দুর্বাডগা নৃত্যপরা।
বৃৃষ্টিধারার নীলাভ জলে শুচীস্নানে
       জুঁই-চামেলী-শ্বেতদোপাটি শুচিস্মিতা
দৃশ্যপটে বর্ষাঋতু জলরঙে হয় সুচিত্রিতা।

বোমার বৃষ্টিতে পোড়ে গাজা



---শামসুল ফয়েজ

ভূমধ্যসাগরের কিনারে
বোমার বৃষ্টিতে পোড়ে গাজা;
নিরাপরাধে অযথা পায় সাজা।
পোড়ে নিদ্রামগ্ন শিশু;
পোড়ে ক্রুশবিদ্ধ যীশু।
পোড়ে জলপাইয়ের পাতা;
পোড়ে রেশমী চুল ভরা
              বালিকার মাথা।
হাসপাতালে পোড়ে আহত-রক্তাক্ত মানুষের
              দুচোখের পানি।
কোরাণ-বাইবেলের পাশে
পোড়ে সুবাসিত সুশান্ত ফুলদানি।

বৈশাখের বেলী



পৌষে-মাঘে সে একেবারেই
বাংলার সাদাসিধা আটপৌরে নারীর মতোই
নিরালঙ্কার নিরাভরণ থাকে।
ফাল্গুনে যখন ভাঁটবনে
বসন্ত উদযাপনের সাজসাজ রব পড়ে,
তখন ভুলেও কেউ তার দিকে তাকিয়ে দেখে না।



পৌষে-মাঘে সে একেবারেই
বাংলার সাদাসিধা আটপৌরে নারীর মতোই
নিরালঙ্কার নিরাভরণ থাকে।
ফাল্গুনে যখন ভাঁটবনে
বসন্ত উদযাপনের সাজসাজ রব পড়ে,
তখন ভুলেও কেউ তার দিকে তাকিয়ে দেখে না।

হালকা বাদামী রঙের কয়েকটা কাঠি
ধরে রাখে ধুলালাগা পাতার অত্যল্প আয়োজন।
বসন্তের বিচিত্র রঙ-রূপের জমজমাট মীনাবাজারে
কে তার খবর রাখে ভালোবেসে!
তার নেই গোলাপের উদ্ধত জৌলুস।
পঙ্কজ পদ্মের রাজসিক সৌকর্য-বিলাস নেই তার।
শিমুলের প্রদর্শনকামিতাও নেই তার ধাতে।
বৈশাখের বেলী গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহেও মানেনা পরাভব।
প্রখর রোদের নিপীড়ন নির্বিবাদে,
সয়ে যায় বেলীর বিকাশমান কুঁড়ি।
দুরন্ত তুফান আমডাল দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে
ছুঁড়ে মারে তার দিকে।
হারায় না বৃষ্টিধারায় তার ঋতুর দায়জ্ঞান।

দেমাগ দেখিয়ে কখনো কাউকে হতচকিত করে না বৈশাখের বেলী।
সুমিষ্ট খুসবুতে আঙিনা মাতিয়ে নিঃশব্দে হৃদয়ে
ঠাঁই করে নেয় বৈশাখের প্রস্ফুতিত বেলী।
পুষ্পপ্রেমিকের দিকে নিরবে তাকিয়ে
বৃষ্টিভেজা নেকাবের নিচে চুপিচুপি মুচকি হাসে
শরমিন্দা শাহজাদি, শ্বেতবসনা অপ্সরী।