Thursday, December 27, 2012

একজন মহীয়সী নারীর প্রস্থানে


(এডভোকেট রোকেয়া বেগম স্মরণে)

কালীবাড়ি বাইলেনের দোতলার বারান্দায়
শোকার্ত লতাগুল্মের পাশে চুপ করে বসে আছে
টবের বাসিন্দা বিষণ্ন বিল্ডিং হাট, মৌচান্দা,
পাতাবাহার, রঞ্জন
একদা চঞ্চল বালক সুবর্ণের বয়স যেন বা বেড়ে গেছে খুব,
তার হাতের লেখায় সহজ বানানে বারবার হয়ে যায় ভুল
শিশুতীর্থ আনন্দধ্বনির সুরঝর্ণা
অনিশ্চিতির উদ্বেগে থমকে উঠে থেকে থেকে
সমস্যায় সংকটে দুর্দিনে দুঃসময়ে
আশ্বস্ত হয়েছে যারা তার মধুর কণ্ঠের বচনে,
তারা রুদ্ধবাক অবিরাম শোকের দহনে
দুধঅলা, গৃহকর্মি, দৈনিক পত্রিকার হকার,
বিপন্ন বিপ্লবী, চন্দ্রাহত কবি, অচেনা কমরেড,
রবীন্দ্র সংগীতের বিমুগ্ধ অনুরাগী,
লাঞ্ছিত-বঞ্চিত নারী প্রিয়জন হারানোর
বেদনায় মুহ্যমান-ব্যথাহত
মহীয়সী দরদি নারীর অন্তর্ধানে
শোকের লু-হাওয়া বয় নিস্তব্ধ অঙ্গনে
শুন্যতার হাহাকার বেদনার চিত্তশুল হানে তাদের হৃদয়ে

নিশীথে অজয় চক্রবর্তী, সকালে রশিদ খান


তারা টিভি মধ্যরাতে ঘরের ভেতরে
          খুলে দিলো সুরের নহর।
নিঝুম সায়রে লাল-নীল পাল তুলে
অনুভবে চলে এলো সংগীতের চুনি-পান্না ভরা
          নাওয়ের বহর।
নিশীথে অজয় চক্রবর্তীর আহির ললিতে
ঘরের মধ্যে নাইটকুইন ফুটতে থাকলো থরে থরে।
জানালার পাশে রজনীগন্ধা মাতিয়ে দিলো রাত
বালিশের কোণে সুরভির শিশি ছিপি খুলে হয়ে পড়ে কাত;
সকালে জাগালো রশিদ খানের তান
আল্লারাখার তবলার বোলে
দূরদরিয়ায় নিয়ে যায় সোনালী সাম্পান।
স্নায়ুপুঞ্জ থেকে জট খুলে নিরাময় দিলো
রশিদ খানের পুরিয়া কল্যাণ।

Thursday, December 6, 2012

নয়নতারা


সব ডালিয়া শুকিয়ে মরে;
গোলাপপাড়া ঝিমিয়ে পড়ে;
ম্যারিগোল্ড ও কারনেশনে
ছন্নছাড়া তাপপেষণে।

ফড়িং কাবু ঘাসের বনে
শ্যামলিমার অন্বেষণে।
চৈত্র দিনে রৌদ্র ঝরে
জল পিপাসু বাগানপড়ে। 

নয়নতারা পাপড়ি মেলে,
রৌদ্রশেলে যায় না হেলে।
নয়নতারা অসংকোচে
নীরব হেসে ক্লান্তি মোছে।
সহনশীলা নয়ন তারা
আমায় করে আত্মহারা।

আরশীনগরে তার দেখা মেলে


শামসুল ফয়েজ

আরশী নগরে তার দেখা মিলে
                   দিলের দহলিজে।
ধ্যানমগ্নতায় নিস্তরঙ্গ নিরালায় তার রূপ ফোটে
                         বিরল মনসিজে।
কেউ কেউ তার সাক্ষাতের আকাংখায়
মহাশূণ্যযানে চড়ে তার খোঁজে
                নক্ষত্রবিতানে।
কোন অনুসন্ধানী সৌভাগ্যবান
তাকে পেতে পারে ঘুমের ভিতরে স্বপ্নের সিথানে
অরূপ পড়শীর কাছে মিলে যাবে
সোনাদানাভরা গুপ্ত ভান্ডারের চাবি।
অকূল পাথার পাড়ি দিতে
অচিন পুরের ঘাটে তার বজরা নাও পাবি।

পিঠার দোকানে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা


শামসুল ফয়েজ

চৌরঙ্গীর মোড়ে জমশেদ আলীর পিঠার দোকানে
রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতার পাতায়
দেদার বিক্রি হচ্ছে গরম চিতই পিঠা।
ক্রেতার ভিড়ে ব্যস্ত দোকানদার
একে একে ছিঁড়ে নিচ্ছে আমাদের
সুপ্রিয় সঞ্চয়িতার একেকটি পাতা ।
কোন পাতায় লেপ্টে দিচ্ছে কাঁচামরিচ ছড়ানো আলু ভর্তা।
কোন পাতায় সর্ষে বাটার সুগন্ধ। 
কোন পাতায় কালোজিরার নরম ঔষধি।
কোন পাতায় ধনে পাতার সুসবুজ মন্ড।
কোন পাতায় মরিচ-রশুন ছড়ানো চ্যাপাভর্তা
খাওয়ার আগেই  মুখে এনে দেয় পানি।
কারো হাতে পড়ছে বলাকা।
কারো হাতে পড়ছে সোনার তরী।
কারো হাতে পড়ছে নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ।
কারো হাতে পড়ছে ক্যামেলিয়া ।
কারো হাতে পড়ছে দুই বিঘা জমি।
কারো হাতে পড়ছে নিরুদ্দেশ যাত্রা।
কারো হাতে পড়ছে ঐক্যতান।
কারো হাতে পড়ছে প্রথম দিনের সূর্য।

নিরক্ষর জমশেদ আলীর কাছে
মুদ্রিত হরফ কোনো মূল্য বহন করে না।
হায়! বিশাল সঞ্চয়িতার এতোগুলো পাতা উল্টিয়েও
জমশেদ আলী রবীন্দ্রনাথকে জানতে পারলো না।
আমরা জমশেদ আলী ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে
কোন সেতু গড়তে পারিনি।